বিভিন্ন অনিয়মের কারনে মির্জাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সাময়িক বরখাস্ত


মাসুদ পারভেজ:
ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও অর্থ আত্নসাত (আর্থিক কেলেঙ্কারিতে) জড়িত থাকার অভিযোগে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মির্জাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ পরিচালনা পরিষদ।
২০১৯ সালে কলেজ চত্বরে খেলতে আসা দুই স্কুল ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে যৌন হেনস্তার অভিযোগে ওই অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এবার তিনি দ্বিতীয়বারের মত বরখাস্ত হলেন। আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মির্জাপুর মহিলা কলেজের ভারপ্রপ্ত অধ্যক্ষ সাদিয়া সুলতানা। তিনি আরও বলেন, গত ৮ মার্চ কলেজ পরিচালনা পরিষদের এক সভায় ৮ নাম্বার রেজুলেশন অনুসারে তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ১০ মার্চ তাকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়।
এদিকে এডহক কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কলেজের বর্তমান এডহক কমিটি বাতিলের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টা আবেদন করেছেন সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ। এ নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী-শিক্ষকসহ এলাকায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
মির্জাপুর মহিলা কলেজের কয়েকজন শিক্ষক ও ভুক্তভোগি ছাত্রীরা জানায়, অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ কথায় কথায় ছাত্রীদের গায়ে হাত দেওয়ার অভ্যাস। দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রীদের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে যৌন হয়রানি করে আসছে। ছাত্রীরা লজ্জায় প্রতিবাদ করতে পারেনি। তাছাড়া কলেজের কাগজপত্রে নয়-ছয় করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অনৈতিকভাবে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছে।
গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কলেজের ছাত্রীরা ফুসে উঠে অধ্যক্ষের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় এবং স্মারকলিপি প্রদান করে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে কলেজ পরিচালনা পরিষদ অধ্যক্ষকে সতর্ক করে এবং অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাকে কলেজ আসা থেকে বিরত থাকতে বলেন।
এরই মধ্যে পরিচালনা পরিষদ কলেজর শিক্ষক সাদিয়া সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে। অধ্যক্ষ হারুন অর রশীদ এসবের তোয়াক্কা না করে মাঝে মঝেই কলেজে গিয়ে কাগজপত্র এবং হাজিরা খাতায় জোর পূর্বক স্বাক্ষর করা অব্যাহত রাখে। এরই মধ্যে কলেজের আর্থিক বিষয়ে নয়ছয়ের প্রমাণ পায় পরিচালনা পরিষদ।
পরে কলেজ পরিচালনা পরিষদ এসব বিষয়ে একাধিকবার সভা করে অধ্যকে তিন বার চিঠি দেয় কারন দর্শানোর জন্য। অধ্যক্ষ চিঠির কোন জবাব দেননি। সর্বশেষ গত ৮ মার্চ কলেজ পরিচালনা পরিষদের এক সভায় অধ্যক্ষে বিরুদ্ধে যৌন ও আর্থিক কেলেঙ্কারি এবং পরিচালনা পরিলনা পরিষদের সাথে ধৃষ্টতাপুর্ণ আচরনের জন্য তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১০ মার্চ তাকে বরখাস্তের চিঠি দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাদিয়া সুলতানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পরিচালনা পরিষদ অধ্যক্ষে বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তদন্তেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগে সত্যতা পাওয়া গেছে। বার বার কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি জবাব দেননি। এজন্য পরিচালনা পরিষদ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
এ ব্যাপারে সাবেক ও বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ বিভিন্ন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে অন্যায় ও পরিকল্পিত ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমি কোন ছাত্রীকে যৌন হয়রানী করিনি এবং অর্থ আত্নসাত করিনি। ছাত্রীরা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। অবৈধ এডহক কমিটি বাতিলের জন্য গত ১৮ জানুয়ারি জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে লিখিত ভাবে আবেদন করেছি।
এব্যাপারে মির্জাপুর মহিলা কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষযক সম্পাদক ও সাবেক এমপি মো. আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী বলেন, কলেজের পূর্ববর্তী পরিচালনা পরিষদ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জন দেন। সেই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসন থেকেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
মির্জাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নজরুর ইসলাম বলেন, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে অভিােযগ আসায় তদন্ত চলছে।